ল্যাপটপ কেনার ১০টি টিপস
যখন কাউকে প্রশ্ন করা হয় যে কোন ল্যাপটপটি কিনলে সবচেয়ে ভালো হবে , তখন একেক জন একেক জবাব দেন এতে আপনার মাথা গুলিয়ে যায়, এই প্রশ্নের কোন পরিষ্কার উত্তর নেই। বাজারে এখন বিভিন্ন ধরণের ল্যাপটপ আছে যেগুলো একটি আরেকটি থেকে দামে, কাজে, ব্যবহারে এবং কনফিগারেশনে সম্পুর্ণ আলাদা। এই পোস্টে আমরা মূলত উইন্ডোজ ল্যাপটপ কেনার ব্যাপারে আলোচনা করব। উইন্ডোজ ল্যাপটপ কেনার সময় যে যে বিষয় গুলো খেয়াল রাখা দরকার সেগুলো হলঃ
১। প্রসেসর এবং গ্রাফিক্সঃ বাজারে এখন ইন্টেলের কোর আই সিরিজের প্রসেসরগুলো বেশি চলছে কারণ এগুলো একই সময়ে বিভিন্ন কাজ একই সাথে করতে পারে। সাধারণ হিসেবে কোর আই ৭ প্রসেসর সম্বলিত ল্যাপটপগুলো কেনা ভালো কারণ এটি সচরাচর ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ ভাল সার্ভিস প্রদান করে থাকে। বাজেট মাঝামাঝি হলে কোর আই ৫ বা কোর আই ৩ প্রসেসরের ল্যাপটপও নিতে পারেন।
আর গ্রাফিক্সের ক্ষেত্রে, আপনি যদি সচরাচর ভিডিও এডিটিং না করেন, থ্রিডি গ্রাফিক্সের কাজ না করেন, ও ভারী গেম না খেলেন তাহলে আলাদা গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত ল্যাপটপ আপনার না হলেও চলবে। আর আপনি যদি গ্রাফিক্সের কাজ করেন ও হাই-ল্যাবেল গেমস খেলেন, তাহলে গ্রাফিক্স কার্ড দরকার হবে। এক্ষেত্রে মোটামুটি বাজেটের মধ্যে হলে এনভিডিয়া জিটিএক্স ১০৫০ থেকে শুরু করে ১০৮০ বা আরও আধুনিক কোনো গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত ল্যাপটপ নিতে পারেন। এজন্য আসুসের গেমিং ল্যাপটপ আরওজি স্ট্রিক্স স্কার এডিশন দেখতে পারেন। আপনার বাজেট যদি বেশি থাকে, তাহলে আসুস আরওজি জেফ্রাস হতে পারে আপনার সেরা পছন্দের গেমিং বা হাই-কনফিগ ল্যাপটপ।
২। ডিসপ্লে /স্ক্রিনের মানঃ যেহেতু ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে আপনাকে সবসময় তাকিয়ে থাকতে হবে, তাই এমন স্ক্রিনের ল্যাপটপ কেনা উচিত যাতে স্ক্রিনটি আপনার সাথে খাপ খাইয়ে যায়। স্ক্রিনের আরো একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এর রেজুলেশন কত তা দেখে ল্যাপটপ কেনা। এক্ষেত্রে ১৯২০x১০৮০ পিক্সেল এর স্ক্রিন সকল কাজের জন্য আদর্শ বিবেচনা করা হয়ে থাকে এবং কেনার সময় অবশ্যই একবার ল্যাপটপটি চালিয়ে দেখে নেওয়া উচিত। স্ক্রিন যদি আলো প্রতিফলন না করে তবে সেটা যেকোনো স্থানে চালানোর জন্য ভাল হবে।
৩। কিবোর্ডঃ ক্রেতা যে ধরণের কি বোর্ডের সাথে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাকে অবশ্যই সে কি বোর্ড সম্বলিত ল্যাপটপটি কিনতে হবে। কেনার সময় অবশ্যই দেখে নেওয়া উচিত যে কিবোর্ডটিতে ব্যাকলিট আছে কিনা। ব্যাকলিট থাকলে অন্ধকারেও ল্যাপটপের বোতাম গুলো দেখা যায়। মাঝারি দামের ল্যাপটপের কিবোর্ডেও আজকাল লাইট থাকে।
৪। আকারঃ ল্যাপটপ এর আকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ল্যাপটপ কেনার সময় মুখ্য বিষয় হয় যদি বহন করা, তাহলে নোটবুক কেনাই যথাযথ । নোটবুক কেনার সময় নোটবুকের ওজন দেখে নেওয়া দরকার। যেকোন ল্যাপটপ যেগুলো আল্ট্রাবুক হিসেবে চিহ্নিত থাকে সেগুলো কেনাই সবচেয়ে ভালো কারণ এটা যেমন হালকা তেমন সরু। সাধারণত যেসকল ল্যাপটপের স্ক্রিন সাইজ ১২.৫-১৩.৩ ইঞ্চি এর মধ্যে থাকে সেগুলোর ওজন ১ থেকে ১.৫ কেজির মধ্যে থাকে। তবে মাঝামাঝি দামে আল্ট্রাবুক পাবেন না। ১৫.৬ ইঞ্চি স্ক্রিনের ল্যাপটপ হতে পারে আদর্শ সাইজের নোটবুক।
৫। র্যামঃ র্যাম হচ্ছে ল্যাপটপ এর ক্ষমতা প্রসেসর উন্নত হয়েও লাভ নেই যদি র্যাম ভালো না হয়। আপনাকে অবশ্যই জিবি অথবা তার থেকে বেশি র্যামের ল্যাপটপ কিনতে হবে যদি আপনি আপনার ল্যাপটপ স্বাচ্ছন্দ্যে এবং মসৃণ গতিতে চালাতে চান।না হয় আপনার ল্যাপটপ এর গতি কমে যাবে হুরহুর করে।
৬। ইউএসবি ৩.০: ইউ এসবি ৩ পোর্ট এর মাধ্যমে ইউএসবি ২ এর তুলনায় দ্রুত গতিতে ডাটা ট্রান্সফার করা যায়। ইউএসবি ৩ ইউএসবি ২ এর তুলনায় ১০ গুণ বেশি তাড়াতাড়ি ডেটা ট্রান্সফার করতে সক্ষম। ফলে আপনার সময়ও অনেক কম লাগবে।এজন্য ল্যাপটপের পোর্টগুলো ইউএসবি ৩ কিনা তা দেখে নেওয়া উচিত। অবশ্য বর্তমানে অধিকাংশ ল্যাপটপেই ইউএসবি ২ এবং ইউএসবি ৩ পোর্ট থাকে।তবে ইউএসবি ৩.০ ব্যবহার করাই ভালো।
৭। হার্ডড্রাইভঃ ল্যাপটপের হার্ডড্রাইভ বেশি দেখে কেনা উচিত যাতে করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণের জন্য জায়গার অভাবে ভুগতে না হয়। ৭৫০ জিবি হার্ডডিস্ক স্পেস খারাপ না, কী বলেন? প্রচলিত হার্ডডিস্ক সময়ের সাথে স্লো হয়ে যায়। আপনি যদি বাজেট একটু বৃদ্ধি করতে পারেন, তাহলে হার্ডডিস্ক বদলে এসএসডি স্টোরেজ নিতে পারেন। ২৫০জিবি এসএসডি স্টোরেজের দাম প্রায় ৮ হাজার টাকা, যেখানে ৫০০জিবি হার্ডডিস্ক পড়বে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মত।এবার আপনার ইচ্ছা আপনি কোনটা নিবেন।
৮। ব্যাটারিঃ ল্যাপটপের ব্যাটারির গায়ে যে রেটিং দেওয়া থাকে সেটি দেখে ল্যাপটপের ব্যাটারি কেনা উচিত। যে সকল ব্যাটারীর গায়ে 44Wh বা 50Wh লেখা থাকে সেগুলো বেশি সময় ধরে চার্জ় সংরক্ষণ করতে পারে। বর্তমানে ব্যাটারি প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে। ল্যাপটপের অফিসিয়াল ডকুমেন্ট দেখে এর ব্যাটারি ব্যাকআপ টাইম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেবেন। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী এটা বিভিন্ন হতে পারে। তবে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ব্যাকআপ হলে ভাল হয়।অনেক ল্যাপটপ আছে যেগুলোর ব্যাটারী খুব একটা ভালো না তাই নেওয়ার সময় খেয়াল করে নিবেন।
৯। ওয়্যারলেস কানেকশন এবং ব্লুটুথঃ নেট কানেকশন ছাড়া আপনি ল্যাপটপ কিনে মজা পাবেন না, তাই ওয়াই ফাই অ্যাডাপ্টরের ক্ষমতা দেখে ল্যাপটপ কিনতে হবে যাতে নির্বিঘ্নে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক চালনো যায়। ডুয়াল ব্যান্ডের যেসকল অ্যাডাপ্টর পাওয়া যায় সেগুলো ভাল মানের হয়ে থাকে। ব্লুটুথের ক্ষেত্রে এখন বাজারে ব্লুটুথ ৪.o নির্ভরযোগ্য।
১০। ফুল সাইজের এসডি কার্ডের পোর্টঃ ল্যাপটপে অনেক সময় এসডি কার্ড লাগানোর দরকার পড়ে । এজন্য ল্যাপটপের সাথে এসডি কার্ডের স্লট আছে কিনা তা দেখে নেওয়া উচিত।
নিচে কিছু ব্রান্ডের নাম বলা হলো:
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের ল্যাপটপ রয়েছে। যেমন আসুস, ডেল, এইচপি, এসার, লেনোভো ইত্যাদি। আপনি যদি ভালো ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে কিনতে পারেন আসুস অথবা ডেল। ল্যাপটপ জগতে এই ব্র্যান্ড দুটি অত্যন্ত ভালো।
আপনি চাইলে এইচপিও নিতে পারেন, তবে এইচপির পারফর্মেন্স এখন আগের মতো নেই, তবুও ভালোই। এছাড়া মোটামোটি মানের ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ নিতে চাইলে নিতে পারেন লেনেভো কিংবা এসার।
এই দুটো ব্র্যান্ডের পারফর্মেন্স খুবই ভালো। এই ল্যাপটপগুলোর প্রাইস নির্ভর করবে আপনার কনফিগারেশনের উপর।

No comments